Header Ads

Header ADS

সরিষা বীজ উৎপাদন পদ্ধতি ( Method of production of mustard seeds)


 

সরিষা বীজ উৎপাদন পদ্ধতি

জলবায়ুঃ অল্প শীত এবং শুষ্ক তথা কম বৃষ্টিযুক্ত জলবায়ু সরিষার পক্ষে উপযোগী। তবে টবি-৭ বেশি ঠাণ্ডা সহ্য করতে পারে না বলে অন্যান্য প্রজাতি বপনের আগেই তাতে বপন করতে হয়। আবহাওয়ার ওপর বীজের বৃদ্ধি ও তেলের ফলন বেশ নির্ভরশীল। স্বাভাবিক উত্তাপে বীজে তেলের পরিমাণ দ্রুত বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে শীত বেশি হলে তেলের পরিমাণ কত হারে বৃদ্ধি পায় এবং তেল কমে যায়।

জমি ও মাটি নির্বাচনঃ উঁচু, মাঝারি উঁচু এবং নিচু জমি যেখানে বৃষ্টির পানি জমে না অথবা বন্যর পানি আগাম সরে যায়, সেখানে সরিষার আবাদ করা যায়। দোআঁশ মাটিতে সরিষা ভাল জন্মে, এঁটেল-দোআঁশ মাটিতেও চাষ করা যেতে পারে । কিন্তু এঁটেল মাটিতে চাষ না করাই উত্তম ।

জমি তৈরিঃ মাটির বুনট অনুযায়ী ৪-৬ টি আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে জমি তৈরি করতে হবে। জমির উপরিভাগ মই এর সাহায্যে সমতল করে নিতে হবে যেন কোথাও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে না পারে ।

জাতঃ বাংলাদেশের উদ্ভাবিত জাতসমূহের মধ্যে টরি-৭, কল্যানীয়া (টিএস-৭২) সম্পদ (এম-১২), বারি সরিষা-৬, বারি সরিষা-৮ ইত্যাদি চাষ করা যেতে পারে। তা ছাড়া বারি সরিষা-১৫, বারি সরিষা-১৬ ও চাষ করা যায়।

বীজের হার, বপনকাল ও বপন পদ্ধতিঃ সরিষা বপনের উপযুক্ত সময় মধ্য আশ্বিন থেকে মধ্য অগ্রহায়ণ ( অক্টোবর-নভেম্বর ), অবশ্য টরি সরিষা বেশি ঠাণ্ডায় ভাল ফলন দিতে না পারার কারণে আগাম বপন করা উত্তম। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চাষ ছাড়া ভেজা মাটিতে ছিটিয়ে বপন করা হয়। শেষ চাষের পর বীজ বপন করে মই দিয়ে ঢেকে দিতে হয়। সারি পদ্ধতিতে ২৫-৩৯ সেমি দূরে সারিতে অবিরতভাবে সামান্য গভীরে বীজ বপন করা যায়। সরিষার বীজ কম আর্দ্রতাসম্পন্ন মাটিতে অঙ্কুরিত হতে পারে। অন্যদিকে আর্দ্রতা বেশি থাকলে চারা কিছুটা লালচে বর্ণ ধারণ করে। তাই একটু শুকানো জমিতেই বীজ বপন করা উত্তম। হেক্টরপ্রতি বীজের হার ৮-১০ কেজি। রাই ও দৌলত সরিষার জন্য প্রতি হেক্টরে ৭-৯ কেজি বীজের প্রয়োজন ।

সারের মাত্রা ও প্রয়োগ পদ্ধতিঃ

সারের নাম

সারের পরিমাণ ( হেঃ )

সার প্রয়োগ পদ্ধতি ও সময়

ইউরিয়া

২৫০-৩০০কেজি

১/২ কেজি ইউরিয়া শেষ চাষের সময় মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে । বাকি ইউরিয়া ফুল আসার সময় মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।

টিএসপি

১৭০-১৮০কেজি

শেষ চাষের সময় মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।

এমপি

৮৫-১০০কেজি

শেষ চাষের সময় মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।

জিপসাম

১৫০-১৮০কেজি

শেষ চাষের সময় মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।

জিংক সালফেট

৫-৭কেজি

শেষ চাষের সময় মাটির সাথে ‍মিশিয়ে দিতে হবে।

বরিক অ্যাসিড

১০-১৫কেজি

শেষ চাষের সময় মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।

 

আগাছা দমন ও পাতলাকরণঃ বীজ বপনের ১৫-২০ দিন পর একবার এবং ফুল আসার সময় দ্বিতীয়বার নিড়ানি দিতে হয়। চারা অত্যন্ত ঘন  হলে পাতলা এবং কোথাও চারা একদম পাতলা হয়ে থাকলে সেখানে প্রয়োজন অনুসারে আবার বীজ বপন করতে হয়। তবে পাতলাকরণের কাজ গাছ ৮-১০ সেমি এবং ১২-১৫ সেমি উঁচু হলে দু’বারে করা উত্তম।

স্বতন্ত্রীকরণ দূরত্বঃ বীজ উৎপাদনের জন্য ৫০০ মিটার দূরত্বে অন্য সরিষার জমি থাকতে হবে।

রোগিংঃ ভেজিটেটিভ গ্রোথ, ফুল আসার সময় ও ফসল কর্তনের সময় রোগিং করে বিজাত, আগাছে ইত্যাদি পরিষ্কার করতে হবে।

সেচ ও নিষ্কাশনঃ অঙ্কুরোদগমের জন্য মাটির আর্দ্রতা কম দরকার হলেও উত্তম ফলনের জন্য প্রায় ২০-২৫ সেমি পানির প্রয়োজন। আর্দ্রতার অবস্থা বুঝে ১-২ টি সেচ দিলে ফলন ভাল হয়। গাছে ফুল আসা ( বীজ বপনের ২৫-৩০  দিনের মধ্যে ) এবং ফল ধরবার সময় ( ৫০-৫৫ দিনের মধ্যে ) হালকা সেচ দিতে হবে। রবি মৌসুমে সাধাণত বৃষ্টি হয় না। কাজেই নিষ্কাশনেরও বিশেষ প্রয়োজন হয় না।

পোকা ও রোগ-বালাই ব্যবস্থাপনাঃ কিছু কীটের প্রকোপ হয়, যেমন- জাব পোকা, প্রজাপতি, স-ফ্লাই, বিছা পোকা ইত্যাদি। তন্মধ্যে জাব পোকা সাচেয়ে বেশি মারাত্মক । কীটনাশক দুপুরের দিকে প্রয়োগ করতে হবে। পাতার দাগ রোগ কয়েকটি ছত্রাক দ্বারা হয়। এতে পাতা ও ফলে কালো দাগ হয়। এছাড়া অরোবাস্কি নামক সপুষ্পক পরজীবী সরিষা গাছের মূলে আক্রমণ করায় গাছের  বৃদ্ধি দারুণভাবে ব্যাহত হয়। দেশের উত্তরাঞ্চলে এ রোগের প্রকোপ কিছুটা বেশি । উপযুক্ত পদ্ধতি প্রয়োগে এদের দমন করতে হবে।

সরিষার ফসল সংগ্রহঃ

মধ্য মাঘ থেকে মধ্য ফাল্গুন ( ফেব্রুয়ারি ) মাসে ফসল্ব সংগ্রহ করা হয়। মাঠের ৮০% গাছ হলদে হলে ফসল সংগ্রহের উপযুক্ত হয়। ফল অতিরিক্ত পরিপক্ব হলে ফেটে মাটিতে বীজ ঝরে পড়ে । তাই এদিকে বিশেষ দুষ্টি দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন । সকালে ঠান্ডা আবহাওয়ার ফসল সংগ্রহ করা উত্তম । মূল সমেত গাছ সংগ্রহ করা যায়। তবে গাছে তৈলাক্তভাব থাকায় মাটিতে সহজে পচে মিশে যেতে পারে না। তাই গোড়া সমেত টেনে উত্তম।

প্রক্রিয়াজাতকরণঃ

ফসল সংগ্রহের পর ছোট ছোট আঁট বেঁচে ৩-৪ দিন রোদে গাছ শুকানো হয়। পরে গরু দ্বারা মাড়াই করা হয়। বীজ আরো ৫-৭ দিন রোদে শুকিয়ে ৫-৬% আর্দ্রতায় কমিয়ে আনতে হয় । ফসল পরিমাণে কম হলে লাঠি দ্বারা পিটিয়েও  মাড়াই করা যায় । ফসল  সংগ্রহের সময় কিছু বীজ অপুষ্ট থাকায় বীজ শুকিয়ে, ঝাড়াই করে বিন্যাস করা একান্ত আবশ্যক। অন্যথায় বীজের মান কমে যাবে। এছাড়া বীজের সাথে মাটির ঢেলা ও অন্যান্য আপত্তিকর দ্রব্য থাকতে পারে, যা নিষ্কাশিত তৈলের মান কমিয়ে দেয়। তাই এদেরকে সরিয়ে ফেলতে হবে।

No comments

Theme images by Storman. Powered by Blogger.