আলু ও মিষ্টি আলুর পুষ্টিমান ও প্রক্রিয়াজাতকৃত খাদ্য (Nutrition and Processing of Potato and Sweet Potato)
আলু ও মিষ্টি আলুর পুষ্টিমান ও প্রক্রিয়াজাতকৃত খাদ্য (Nutrition and Processing of Potato and Sweet Potato)
ভূমিকা ও গুরুত্ব: আলু হচ্ছে উদ্ভিদ বিঙ্গানের সোলানেসি পরিবারভুক্ত একটি সবজি। এ পরিবারের অন্যান্য সবজিগুলো হচ্ছে টমেটো, মরিচ ও বেগুন। বাংলাদেশের সর্বত্রই আলুর চাষ হয় তবে অনুকূল পরিবেশ ও বাজারজাতকরণের সুবিধার জন্য ঢাকা, রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, জয়পুরহাট, পাবনা, রাজশাহী ও সিলেটে আলুর চাষ বেশি হয়। ২০১৪ সালে বাংলাদেশে ৪.৬২ লাখ হেক্টর জমিতে ৮৯.৫০ লাখ টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী আলুর উৎপাদন তিনগুণ বেড়েছে। অনেক দেশে আলু প্রধান খাদ্য বা সম্পূরক খাদ্য । কেননা আলুতে প্রচুর শ্বেতসার থাকে । আলুর মধ্যে বিশেষত মিষ্টি আলু গরিবের খাদ্য হিসেবে বিবেচিত। প্রতি ইউনিক জমি থেকে মিষ্টি আলুতেই সবচেয়ে বেশি ক্যালরি পাওয়া যায়। হলদে শাঁসযুক্ত ১৩ গ্রাম মিষ্ট আলু থেকে একজন পূর্ণ বয়স্ক লোকের সারাদিনের ভিটামিন-এ এর চাহিদা পূরণ হয়। উৎপাদনের দিকদিয়ে বাংলাদেশে খাদ্য ফসলসমূহের মধ্যে মিষ্টি আলুর স্থান চতুর্থ । বর্তমান বিশ্বে মাথাপিছু সবচেয়ে বেশি আলু খায় পূর্ব ইউরোপের লোকজন । আয়ারল্যান্ডে আলু একটি প্রধান খাদ্য । ফ্রান্স ও হল্যান্ডে আলুকে ভূমির আপেল বলে। রাশিয়ায় আলুকে সেকেন্ড ব্রেড বলে।
গোল আলুর চেয়ে মিষ্টি আলুতে ক্যালরি বেশি । মিষ্টি আলু ভিটামিন- এ এর একটি অন্যতম উৎস । মিষ্টি আলু প্রক্রিয়াজাত করা হলে কুুটিরশিল্প জোরদার হবে এবং ছোট ছোট খাদ্য প্রস্তুত কারখানা সৃষ্টিসহ নিবিড় শ্রম বাজার সৃষ্টি হবে। কিন্তু আমাদের দেশের সংস্কৃতি ও আর্থ -সামাজিক অবস্থা এবং খাদ্যাভ্যাসের কারণে মিষ্টি আলু হতে বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরির উপযুক্ত কৌশল চালু করা যাচ্ছে না।
কোরিয়ার মিষ্টি আলু প্রধানত মানুষের খাবার এবং প্রাণিখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় । মিষ্টি আলু হতে হটকেক. দুধ, নুডলস, ক্যান্ডিজাতীয় খাদ্য কোরিয়ায় অতি জনপ্রিয় । তাইওয়ানে উৎওয়ানে উৎপাদিত মিষ্টি আলুর ৭৩ ভাগ প্রাণিখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মিষ্টি আলুর হালকা রঙের শাঁস এবং উচ্চ মাত্রার স্টার্চ সমৃদ্ধজাত মিষ্টি আলু স্টার্চ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। মিষ্টি আলুর স্টার্চ গোল আলু, ভুট্রা ও কাসাভার স্টার্চ এর তলনায় এবং অন্যান্য গুণাগুণের দিক দিয়ে মাঝামাঝি মানের। পেরুতে মিষ্টি আলুর আটা মুদি দোকনে ভোগ্যপন্য হিসেবে এবং বাড়ির বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। সয়া সস তৈরিতে গমের ময়দার পরিবর্তে মিষ্টি আলুর আটা ব্যবহার করা যায় । কমলা রঙের স্টার্চযুক্ত মিষ্টি আলুতে গাজর বা অন্যান্য সবজি বা ফল হতে বেশি ক্যারোটিন বিদ্যমান।
আলু ও মিষ্টি আলুর পুষ্টিমান:
আলুর পুষ্টিমান: গোল আলু একটি কন্দজাতীয় সবজি যার পুষ্টিমান চাল ও আটা হতে কোন অংশেই কম নয় । ভাতের বিকল্প হিসেবে আলু খেতে কোনই দাধা নেই। সিদ্ধ আলুতে শুধু ক্যালরি বাদে পুষ্টির অন্যান্য উপাদান ভাতের তুলনায় বেশি থাকে। ভাতের জৈবিক আমিষের অনেক উৎকৃষ্টতর। বহুমূত্র রোগীর জন্য আলু কম ক্ষতিকর, কারণ একই পরিমাণ সিদ্ধ আলুতে ভাতের তুলনায় ক্যালরি অনেক কম। সে কারণেই আলু খেলে স্থুলকার হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
সিদ্ধ আলুতে খনিজ পদার্থের পরিমাণ ভাত বা রুটি হতে বেশি এবং সিদ্ধ আলু শুধু লবণ ও মশলা দিয়েও খাওয়া যায়। আলুতে ভিটামিন-সি বিদ্যমান, যা ভাতে নেই। ভিটামিন-বি বা নায়াসিন সমপরিমাণ ভাত অপেক্ষা আলুতে বেশি থাকে। আলুতে চর্বি নেই বললেই চলে। যাদের দেহে ওজন বৃদ্ধির প্রবণতা রয়েছে তারা প্রধান খাদ্য হিসেবে আলু খেয়ে উপকৃত হবেন। আলুর আঁশজাতীয় পদার্থ চাল ও গম হতে বেশি, যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণে সহায়ক। স্থুলদেহ, হৃদরোগ ও কোষ্ঠকাঠিন্য রোগীর জন্য আলু উৎকৃষ্ট খাদ্য। নিম্নের সারণিতে আলু ও চালের তুলনামূলক পুষ্টিমান দেখানো হলো-
সারণিঃ আলু ও চালের তুলনামূলক পুষ্টিমান ( প্রতি ১০০ গ্রামে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ)
উৎসঃ সবজি বিঙ্গান - ড. মোঃ মামুনুর রশীদ
No comments